ছবি তোলা থেকে শুরু করে ভিজ্যুয়াল গল্প বলার কৌশল—সব মিলিয়ে সাংবাদিকতাকে নতুনভাবে জানতে ১২ জন তরুণ সাংবাদিক আমাদের সাথে যাত্রা শুরু করেছেন। তাঁদের অসাধারণ কাজের জন্য চোখ রাখুন!
টেক্সট: সৈয়দ সামিউল বাসার আনিক
তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার কাজ, বিশেষ করে সরাসরি রিপোর্টিং - সবসময় সহজ কাজ নয়। টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালের সামাজিক গণমাধ্যমগুলো এখন সরাসরি সম্প্রচারে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এর ফলে সাংবাদিকদের সামনে সুযোগ তৈরি হয়েছে মুহূর্তের মধ্যে সরাসরি দর্শকের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়ার, জরুরি পরিস্থিতির আপডেট দেওয়া, ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার নেওয়া কিংবা ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত সরাসরি তুলে ধরার। তবে সব সাংবাদিক এই সরাসরি রিপোর্টিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এখন টিভি’র রাফসান নিঝুমের মতো কেউ কেউ লাইভে যেতে দ্বিধা অনুভব করেন, এমনকি অনেক সময় ইচ্ছে করেই এমন দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন ।
সম্প্রতি রাফসানের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয় এমআরডিআই এবং ফোয়ো মিডিয়া ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একটি ভিজ্যুয়াল জার্নালিজম বুটক্যাম্প। এই প্রশিক্ষণ তাঁর মধ্যে থাকা দ্বিধা আর অস্বস্তিকে আত্মবিশ্বাসে রূপান্তরিত করে এবং শেখায় কীভাবে সহজে সরাসরি রিপোর্টিং করা যায়। রাফসান বলেন, “এই ক্যাম্প আমাকে সরাসরি রিপোর্টিং-এর সময় শুধু দর্শকদের সঙ্গে যুক্ত থাকার কৌশল শেখায়নি বরং সরাসরি রিপোর্টিং-এর গুরুত্ব সম্পর্কেও গভীর ধারণা দিয়েছে।“
এমআরডিআই-এর ভিন্নধর্মী আয়োজন ভিজ্যুয়াল জার্নালিজম বুটক্যাম্প দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে আসা ১২ জন উদীয়মান সাংবাদিক ও ভিডিও স্টোরিটেলারদের নিয়ে ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এই বুটক্যাম্পটির মাধ্যমে তাঁরা অভিজ্ঞ ভিজ্যুয়াল সাংবাদিকদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পেয়েছেন।
ভিজ্যুয়াল সাংবাদিকতায় সফল ক্যারিয়ার গড়তে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও কৌশল শেখানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে । এই বুটক্যাম্পের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা একদিকে যেমন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পান, তেমনি নিজেদের অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারেন যার ফলে তাঁরা আগামীর সাংবাদিকতা জগতে আত্মবিশ্বাসের সাথেই এগিয়ে চলার প্রেরণা লাভ করেন। বুটক্যাম্পে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় তার মধ্যে ছিল: ভিজ্যুয়াল সাংবাদিকতায় গল্প বলার কৌশল, দক্ষতার সাথে সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং অনুসন্ধনী রিপোর্ট তৈরিতে গবেষণার পাশাপাশি সরাসরি রিপোর্টিংকে আরও নিখুঁতভাবে প্রস্তুত করার পদ্ধতি সম্পর্কিত বিষয়গুলো বুটক্যাম্পে গুরুত্ব পায়।
বেসরকারি সম্প্রচারমাধ্যম আরটিভির সাংবাদিক মো. শাকিবুর রহমান অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে তাঁর রিপোর্টের ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনাকে আরও আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত করে তুলতে এই বুটক্যাম্প থেকে অর্জিত ব্যবহারিক জ্ঞানগুলো তাঁর কাজে আসবে। “শাকিব বলেন বুটক্যাম্প শুধু আমার দক্ষতা বৃদ্ধি করেনি, সাথে সাথে প্রতিদিনের ঘটনাকে নতুন চোখে দেখা এবং সেখান থেকে নতুন নতুন গল্প তৈরি করার উৎসাহ দিয়েছে। যেগুলো হয়তো অনেকেই আগে কাভার করেছে, কিন্তু তবে আমি এখন সেগুলোকে বলতে পারব এক ভিন্ন ধারায়।
সাংবাদিকতার ক্রমবিকাশমান জগতে এগিয়ে থাকতে হলে শুধু বই-নির্ভর পড়াশোনা যথেষ্ট নয়—এর জন্য প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়। একারণেই অনন্য এক শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবে এমআরডিআই-এর ভিজ্যুয়াল জার্নালিজম বুটক্যাম্প একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এই উদ্যোগ ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ, অংশগ্রহণমূলক শিখন এবং মিডিয়া পেশাজীবীদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও দিকনির্দেশনাসমূহ —কার্যকর সমন্বয় সাধন করেছে।
যা এই বুটক্যাম্পকে আলাদা করেছে
অভিজ্ঞ ভিজ্যুয়াল সাংবাদিক ও মিডিয়া খাতের বিশেষজ্ঞগণ তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে অকৃপণভাবে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে এই বুটক্যাম্পের সফলতার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন ব্যবহারিক অনুশীলন ও তাঁদের দিকনির্দেশনার ফলে প্রশিক্ষণটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও ফলপ্রসূ। অংশগ্রহণকারীরা শুধু বইয়ের জ্ঞান নিয়েই ফিরেননি, সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন বাস্তব সাংবাদিকতার প্রয়োগযোগ্য দক্ষতাও।
![]() |
![]() |
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর মোহনা হোসেন বলেন “সাংবাদিকতা যে শুধুমাত্র ৯টা-৫টার চাকরি নয় বরং এটা একটি সৃজনশীল কাজ তা এই বুটক্যাম্পে অংশ নিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি। সাংবাদিকতা হলো আলো আর ক্যামেরার সঙ্গে শব্দ মিলিয়ে গল্প বলার কৌশল, অনেক সময় তার চেয়েও বেশি কিছু। ভবিষ্যতে আমার কাজে আমি এই কৌশলধর্মী উপাদানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করবো।
প্রতিবছরই অনেক তরুণ সাংবাদিক এই সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হলেও তাদেরকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও কাঠামোবদ্ধ প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের অনেক নিউজরুমেরই থাকে না। ফলে নতুন সাংবাদিকদের বেশিরভাগ সময়ই কাজ করতে গিয়ে শিখতে হয়। এই সীমাবদ্ধতা বুঝে ভিজ্যুয়াল জার্নালিজম বুটক্যাম্পটি এমআরডিআই চালু করে। এই প্রশিক্ষণে সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় কিছু টুলসের ব্যবহার ও কৌশল শেখানো হয় যা তাঁদের পেশাগত জীবনে আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
এমআরডিআই-এর প্রকল্পকর্মীরা বুটক্যাম্পের শুরু থেকেই ভিন্নধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিভিন্ন পূর্ণাঙ্গ শিখন অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে । প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর জন্য নির্ধারিত একজন করে মেন্টর রাখা হয়েছে, যিনি পুরো ভিজ্যুয়াল জার্নালিজমের রিপোর্টিং যাত্রায় তাদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার পাশাপাশি তাঁদের উৎসাহ জোগাবেন - এই উদ্যোগটিই এই বুটক্যাম্পের একটি বিশেষ দিক।
প্রথম দিন থেকেই এমআরডিআই-এর পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ দেওয়া হয় যাতে তারা তাঁদের পছন্দমতো বিষয়ভিত্তিক একটি গল্পের ধারণা উপস্থাপন করতে পারে এবং এটিই পরবর্তীতে তাঁদের ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। এই গল্পের ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের নির্ধারিত মেন্টরের সঙ্গে কাজ করে ধাপে ধাপে গল্প নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়া শিখবেন।
তবে এই অঙ্গীকার শুধু বুটক্যাম্পেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রাথমিক বুটক্যাম্প শেষ হওয়ার এক মাস পর, একই অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে একটি ফলো-আপ বুটক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে। এই ফলো-আপের লক্ষ্য হলো—তাঁরা যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যে অর্জন করেছেন তা আরও একবার শাণিত করা এবং সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আরও গভীর বিশ্লেষণের সুযোগ করে দেওয়া।